cropped-Black-White-Minimalist-Business-Logo.jpg
নিকলী হাওর

ভ্রমণ প্রিয়াসি মানুষের কাছে, এখনকার সময়ের একটি অন্যতম স্থান হয়ে পরিচিতি লাভ করেছে নিকলী হাওর (Nikli Haor)। প্রবাহমান স্বচ্ছ পানি, নীল দিগন্ত, চারিপাশে মানুষের আনাগোনা, মাঝিদের মাছ ধরার দৃশ্য আর কোথাও কোথাও জেগে ওঠা চর— সব মিলিয়ে যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব মিথস্ক্রিয়া কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে, যা রাজধানী শহর ঢাকা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

নিকলী হাওর বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থান করলেও এর নাম এসেছে নিকলী উপজেলা থেকে। তবে এই হাওরের পরিধি পার্শ্ববর্তী অষ্টগ্রাম, মিঠামইন এবং ইটনা-উপজেলা পর্যন্তও বিস্তৃত এবং সব মিলিয়ে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও স্নিগ্ধ পরিবেশের অধিকারী এই হাওর, যেটা বর্তমানে ভ্রমণ প্রিয়াসু মানুষের আদর্শ টুরিস্ট স্পট হিসেবে অবস্থান করছে। যারা একদিনের ট্যুর দিতে পছন্দ করেন, বলতে পারেন তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো ও আদর্শ উপভোগ্য স্থান নিকলী হাওর। 

নিকলী হাওর (Nikli Haor Kishoreganj) এর প্রধান আকর্ষণ

নিকলী হাওর এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে– স্বচ্ছ জলরাশি। কেননা যতদূর চোখ যায় দেখা যায় হাওরের স্বচ্ছ জলরাশি এবং সাদা তুলার মত মেঘ। শুধু কি তাই! বিশাল জলরাশির মাঝে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম, যেন সেগুলো এক একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। সেই সাথে পুরো হাওর জুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি। সাথে আরও রয়েছে করচের বন এবং শুশুকের লাফালাফি। 

সব মিলিয়ে যেন ভ্রমণ পিয়াসুদের মনের ক্লান্তি মেটানোর এক অপূর্ব নীলাভূমি নিকলী হাওর। যেখানে ঘুরে এলে খুঁজে পাওয়া যায় গ্রামীণ পরিবেশের ছোঁয়া। মূলত এই স্থানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে– অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপভোগ্য ব্যবস্থাপনা। তবে অনেকেই জানতে ইচ্ছুক নিকলী হাওর ভ্রমণ উপযুক্ত সময় সম্পর্কে। 

সত্যি বলতে আপনি যদি এই হাওরের অপূর্ব মনোরম সৌন্দর্য সম্পূর্ণভাবে উপভোগ করতে চান, তাহলে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে বর্ষাকালের জন্য। কারণ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ওই স্থানটি সবচেয়ে সুন্দর আঙ্গিকে সেজে ওঠে। আর তাই একদমই ভিন্ন রূপ উপভোগের জন্য নিকলী হাওরের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। 

তো আপনাদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যে ডিসাইড করে ফেলেছেন– পরবর্তী টুরিস্ট স্পট হিসেবে নিকলী হাওর ভিজিট করবেন। তাহলে আসুন এ পর্যায়ে জেনে নেওয়া যাক– নিকলী হাওর ভ্রমণ করতে কত টাকা খরচ পড়বে, নিকলী হাওরে কিভাবে যাবেন, কিভাবে ঘুরবেন, কোথায় কি খাবেন, কোথায় থাকবেন এবং নীকলি হাওর ভ্রমণ গাইড সম্পর্কে এ টু জেড। 

নিকলী হাওরে যাবেন কিভাবে?

নিকলী হাওরে যাওয়ার উপায় কি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলব– নিকলী হাওড়ে যাওয়ার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে দুইটি মাধ্যম খোলা রয়েছে, আপনার জন্য। অতএব আপনি নিকলী হাওর ভ্রমণের জন্য দুই ভাবে যেতে পারবেন। এক– বাসে করে, দুই– ট্রেনে চেপে। 

আপনি যদি ঢাকার বাসিন্দা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সবচেয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করতে পারবেন এই জায়গাটি। কেননা ঢাকা থেকে ট্রেন অথবা বাসে নিকলী হাওর পৌছাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় লাগে। এমনকি সেখানে আপনি মোটরসাইকেলেও যাতায়াত করতে পারবেন। 

অন্যদিকে আপনি যদি অন্য কোন জেলায় বা অন্য কোন বিভাগের বাসিন্দা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র বাস অথবা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ নিকলী হাওর পৌঁছাতে পারবেন। আর এর জন্য আপনার মোটামুটি সময় লাগবে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা অথবা একটু বেশি। 

এখন কথা হলো – ঢাকা থেকে নিকলী হাওরে পৌঁছতে বাসে কত টাকা খরচ পড়বে এবং ট্রেনে কত টাকা খরচ পড়বে। মূলত এ সম্পর্কিত আরো খুঁটিনাটি জানতে নিচের অংশটুকু পড়ুন। 

নিকলী হাওর ভ্রমণ খরচ

নিকলী হাওর ভ্রমণের ক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য আপনি যদি রেলপথ বেছে নেন, সেক্ষেত্রে ট্রেনের টিকিট কাটতে মোট খরচ পরবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। অন্যদিকে যদি সড়কপথে বাসে চেপে যেতে চান সেক্ষেত্রে জন প্রতি বাসের ভাড়া পরবে ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা। 

আর হ্যাঁ, রেলপথে যাতায়াত করলে আপনাকে মূলত গচিহাটা স্টেশনে নামতে হবে। অতঃপর সেখান থেকে ইজি বাইক বা সিএনজি রিজার্ভ করার মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে আপনার গন্তব্য স্থলে। এক্ষেত্রে আপনি যদি ইজিবাইক ভাড়া করেন সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ৩৫ টাকা, আর রিজার্ভ নিলে সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর সিএনজি রিজার্ভ করলে সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। 

আর হ্যাঁ, যদি আপনি কিশোরগঞ্জের ই বাসিন্দা হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে নিকলী হাওরে পৌঁছাতে খরচ পড়বে মোটামুটি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। কেননা এ ক্ষেত্রে সিএনজি অথবা অটো রিজার্ভ করতে হবে আর সময় লাগবে এক ঘন্টা বা তার একটু বেশি অথবা কম। কেননা নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। 

পাশাপাশি আরও কিছু আনুষঙ্গিক খরচও রয়েছে। আর এই খরচ মূলত নির্ভর করবে আপনার উপর। যেমন আপনি কোথায় থাকছেন, কোথায় কোথায় ঘুরছেন, কি কি খাবার খাচ্ছেন অথবা কি কি কেনাকাটা করছেন ইত্যাদি এ সকল বিষয়ের উপর। 

কোথায় খাবেন | কোথায় থাকবেন | ঘুরবেন কিভাবে!

নিকলী হাওরের আশেপাশে মোটামুটি মানের কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচিত হলো হোটেল সেতু, ক্যাফে ঢেউ, হোটেল শ্রাবণী, হোটেল গাংচিল। তাই আপনি খাবারের স্থান হিসেবে বেছে নিতে পারেন এই হোটেল গুলো। 

এছাড়াও নিকলী হাওরে রয়েছে ভালো মানের কিছু রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজ। যেগুলো সম্প্রীতি চালু হয়েছে। মূলত এই ধরনের রিসোর্টে আপনি থাকতে চাইলে মোটামুটি এক রাতের জন্য খরচ পড়বে ৬০০ থেকে ১০০০ টাকা বা এরচেয়ে কিছু। নিচের চার্ট টি থেকে দেখে নিন– নিকলী হাওর রিসোর্ট, নিকলী হাওর গেস্ট হাউস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য। 

নিকলী হাওড় রিসোর্ট নিকলী হাওর গেস্ট হাউজ
মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট এন্ড এগ্রো লিমিটেড আনুমানিক ৩৫ একর জমির উপর তৈরিকৃত একটি অত্যন্ত সুন্দর একটি রিসোর্ট। যার ভেতরে রয়েছে থ্রি স্টার মানের ১০ টি কটেজ। এখানে মূলত নিম্ন বর্ণিত সুবিধাগুলো পাওয়া যায়। যথা–ইনডোর প্লে এরিয়াআউটডোর পার্টি সেন্টারসুইমিং পুলওয়াটার বোর্ডপার্কদেশি ও চাইনিজ থাই ফুড সহ প্রভৃতি। নিকলী হাওরে রিসোর্ট এর পাশাপাশি রয়েছে চেয়ারম্যান গেস্ট হাউজ। যেখানে থাকতে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন ০১৯৫৬০৭১৫৬৩ এই নম্বরে। আর হ্যাঁ, আপনি চাইলে সেখানে গিয়ে নিকলী হাওরের শাহজাহান গেস্ট হাউজেও রাত্রি যাপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যে সেবাগুলো ঐ সকল গেস্ট হাউস থেকে পেয়ে থাকবেন সেগুলো হলো —সকালের ব্রেকফাস্টনিরাপত্তার সুব্যবস্থাওয়াইফাই সংযোগগাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থাসার্বক্ষণিক বিদ্যুতের সুব্যবস্থাএসি রুমনন এসি রুমসিসি ক্যামেরায় আওতাধীন নিরাপত্তার সুব্যবস্থামনোরম পরিবেশে বারান্দাসহ নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ প্রভৃতি।

আর হ্যাঁ, নিকলী হাওরে পৌঁছানোর পর সেখানে মূলত আপনি ছোট নৌকা বড় নৌকা বা মাঝারি নৌকায় ঘোরাঘুরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে ছোট নৌকার ভাড়া ঘন্টা প্রতি প্রদান করতে হবে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং বড় নৌকার ক্ষেত্রে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর আপনি যদি বেশি সময়ের জন্য অর্থাৎ এক ঘন্টার বেশি সময় নৌকাতে ঘুরতে চান সেক্ষেত্রে ভাড়া কিছুটা কম হবে। 

তো পাঠক বন্ধুরা, কিশোরগঞ্জের অন্যতম মনোমুগ্ধকর পরিবেশের অধিকারী নিকলী হাওরে আপনি কবে যাচ্ছেন? কমেন্ট করে জানাবেন। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিকলী হাওর ভ্রমণ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থেকে থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দেবেন। সবাইকে ধন্যবাদ এবং আল্লাহ হাফেজ। 

নতুন দর্শনীয় স্থান